ইতিহাস ঐতিহ্য ডেস্ক : ১২ জুন ২০২২, রবিবার, ৭:২২:২৭
খরার কারণে ইরাকের বৃহত্তম জলাশয়ে পানির স্তর মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ার পরে প্রত্নতাত্ত্বিকরা আবিষ্কার করেছেন ৩,৪০০ বছরের পুরনো একটি শহরের ধ্বংসাবশেষ। যেখানে একসময়ে ছিল একটি প্রাসাদ এবং একটি বিস্তৃত দুর্গ। ব্রোঞ্জ যুগের সময়ে এখানে বসতি গড়ে উঠেছিল। শহরটি টাইগ্রিস নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল।
বর্তমানে এখানে রয়েছে মসুল বাঁধ। বাঁধটি পুনরায় পানিতে ভরাট হবার আগে প্রাচীন শহরটির ধ্বংসাবশেষ খনন করতে শুরু করেছিলেন গবেষকরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরার পরিস্থিতি কীভাবে অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারগুলি সামনে এনেছে তার সর্বশেষ উদাহরণ গত মাসে দেখা গেছে। নেভাডায়, লেক মিডে পানির স্তর হ্রাস পেয়ে কয়েক দশক পুরানো কঙ্কালের অবশেষ পাওয়া গিয়েছিল।
জার্মান এবং কুর্দি প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল জানাচ্ছেন ইরাকের প্রাচীন শহরটি কুর্দিস্তান অঞ্চলে কেমুন নামে পরিচিত একটি স্থানে অবস্থিত। জার্মানির ফ্রেইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ার ইস্টার্ন আর্কিওলজির জুনিয়র প্রফেসর এবং গবেষণা দলের সদস্য ইভানা পুলজিজ বলেন, ১৫৫০ থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে মিতানি সাম্রাজ্যের সময় বসতিটি গড়ে ওঠে। যেহেতু শহরটি সরাসরি টাইগ্রিসের উপর অবস্থিত ছিল, এটি মিতানি সাম্রাজ্যের মূল অঞ্চলকে সংযুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে অনুমান গবেষক দলের।
শহরের উত্তর-পূর্ব পরিধি বিস্তৃত ছিল বর্তমান সিরিয়া পর্যন্ত। গবেষকরা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে টাওয়ার, একটি স্মারক প্রাসাদ এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি বড় ভবন পেয়েছেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই অঞ্চলটিকে প্রাচীন শহর জাখিকু বলে মনে করছেন, যা একসময় অন্যতম রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল।
নগরের বড় বড় দুর্গের যে প্রাচীর রোদে শুকানো মাটির ইট দিয়ে নির্মিত হয়েছিল তা সত্ত্বেও আশ্চর্যজনকভাবে ভালভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ১৩৫০ সালের দিকে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের জেরে ব্রোঞ্জ যুগের শহরটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। খননকালে পাঁচটি সিরামিক পাত্রও পাওয়া যায় যাতে ১০০ টিরও বেশি ট্যাবলেট কিউনিফর্ম লিপিতে খোদাই করা ছিল।
জার্মানির টিউবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ার ইস্টার্ন আর্কিওলজি বিভাগের পরিচালক এবং গবেষণা দলের সদস্য পিটার ফাল্জনার বলেছেন, কাদামাটি দিয়ে তৈরি কিউনিফর্ম ট্যাবলেটগুলি এত দশক ধরে পানির নিচে টিকে ছিল। ফসল শুকিয়ে না যাওয়ার জন্য ডিসেম্বরের শুরুতে মসুল বাঁধের পানির স্তর নিচে নামানোর পর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি উন্মোচিত হয়। ইরাকের এই অঞ্চলটি এমনিতেই কম বৃষ্টিপাত এবং চলমান খরার দ্বারা জর্জরিত। জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন শহরটির যতটা সম্ভব মানচিত্র তৈরি করতে এবং খনন করতে দৌড়েছিলেন।
১৯৮০-এর দশকে মসুল বাঁধ নির্মাণের পর থেকে এই সাইটটি ক্রমাগত পানির নিচে চলে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে গত তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মসুল জলাধারের জলের স্তর অনেকটাই নেমে যায়, তারপরেই গবেষকরা এই হারিয়ে যাওয়া শহরের সন্ধান পান। প্রাচীন শহরটির সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধ্বংসাবশেষটিকে প্লাস্টিকের আবরণ দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন এবং স্থানটিকে নুড়ি দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছিলেন যাতে কাদামাটির দেয়াল রক্ষা করা যায়।
তবে গবেষকরা চিন্তিত কারণ ফেব্রুয়ারী থেকে বাঁধের পানির স্তর ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং শহরটি এখন আবার ডুবে গেছে। বাঁধের পানি আবার কবে নামবে এবং জেগে উঠবে হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস তা এখন সময়ের ওপর নির্ভর করছে বলে জানাচ্ছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
সূত্র: www.nbcnews.com
Tags: ইরাক, ঐতিহাসিক-শহর, ঐতিহ্য, টাইগ্রিস নদী, ধ্বংসাবশেষ, পুরনো-শহর, প্রত্নতত্ত্ব
Rent for add