মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ : ১৩ নভেম্বর ২০২২, রবিবার, ২:২৮:৫৩
১৯৭০ সালের এইদিনে (১৩ নভেম্বর) অকল্পনীয় তীব্র এক ঘূর্ণিঝড় হামলে পড়েছিল আমাদের দক্ষিণাঞ্চলে। এটি ছিল বিশ্বের রেকর্ডকৃত সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়। এতে সরকারী হিসেবে প্রায় ৫ লাখ এবং বেসরকারী হিসেবে ১০ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারান।
ঘূর্ণিঝড়টি ৮ই নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হয় এবং ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কয়েকদিন ধরেই তাণ্ডব চলছিল। সর্বশেষ ১২ নভেম্বর মধ্যরাতে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৪ কিমি (ঠিকই পড়েছেন, ২২৪ কিমি)এ উন্নীত হয় এবং সে রাতেই তা উপকূলে আঘাত করে।
আবার, প্রচণ্ড বায়ুপ্রবাহের তাড়নায় সৃষ্টি হয় জলোচ্ছ্বাস। প্রায় ১০-৩৩ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস এসে উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ প্লাবিত করে ফেলে। এতে ঐসব এলাকার বাড়ি-ঘর ও শস্য স্রোতে তলিয়ে যায়। রাতভর ধ্বংসযজ্ঞের পর বেঁচে থাকা মানুষগুলো দিনের বেলা খুঁজে পান কেবল লাশের স্তুপ।
চট্টগ্রাম, ভোলা, চরফ্যাসন, মনপুরা, সন্দ্বীপ, বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, বোরহানুদ্দিন, চর তজুমদ্দিন, দক্ষিণ মাঈজদী, হারিয়াঘাটা অজানা-অচেনা এলাকায় পরিণত হয়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল তজুমদ্দিন উপজেলা, সেখানে ১,৬৭,০০০ জন অধিবাসীর মধ্যে ৭৭,০০০ জনই (৪৬%) প্রাণ হারান।
জলোচ্ছ্বাসে নিখোঁজ হয়েছিল ২০ হাজার জেলে নৌকা; মারা গিয়েছিল ১০ লক্ষাধিক গবাদিপশু; ধ্বংস হয়েছিল ৪ লাখের বেশি বাড়িঘর। দাসেরহাট বাজারে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী ছিলেন চিত্ত বাবু। তাঁর গুদামঘরে চাল, ধান, সুপারি ছিল। এক রাতের তাণ্ডবে তিনি একেবারে রিক্ত-নিঃস্ব হয়ে যান।
ঝড়টি “The Great Vola Cyclone” নামে পরিচিতি পায়। এটি ছিল সিম্পসন স্কেলে ৩য় মাত্রার ঘূর্ণিঝড়। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) ২০১৭ সালের ১৮ মে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে এই সাইক্লোনকে সবচেয়ে শক্তিশালী সাইক্লোন হিসেবে দেখানো হয়।
Tags: ভোলা, ভোলা সাইক্লোন, মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ
Rent for add