মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ : ১৮ নভেম্বর ২০২২, শুক্রবার, ৫:৪৭:০৩
আজ ১৮ নভেম্বর। ১৮৫৭ সালের এইদিনে চট্টগ্রামে ৩৪ বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ৪ শত সৈনিক বিদ্রোহ করেন। আতঙ্কে বৃটিশরা সমূদ্রে জাহাজে আশ্রয় নেয়। এতে চট্টগ্রাম ৩০ ঘন্টা বৃটিশ শাসন থেকে মুক্ত ছিল। এই বিদ্রোহের নেতা ছিলেন হাবিলদার রজব আলী খাঁ।
শুরুতেই বিদ্রোহীরা কয়েকটি ইংরেজ দলকে পরাজিত করে জেল থেকে মুজাহিদদেরকে মুক্ত করেন। এরপর চট্টগ্রাম ট্রেজারিতে কর্তব্যরত বৃটিশ অফিসারদেরকে পরাভূত করে ট্রেজারি দখল করে নেন।
সেখান থেকে বিদ্রোহীরা ঐতিহাসিক প্যারেড গ্রাউন্ডে একত্রিত হন। তারপর তারা সেনা-অস্ত্রাগার দখল ও লুট করেন। সিপাহীরা যে যা পারেন অস্ত্র গ্রহণ করেন এবং বাকি অস্ত্রে আগুন ধরিয়ে দেন। ১৯ নভেম্বর শেষ রাতে তাঁরা চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন।
ত্রিপুরা রাজার সাহায্য পাবার আশায় তারা ত্রিপুরা সীমানায় যান। রজব আলী ভেবেছিলেন- ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে এদেশীয় রাজারাও স্বাধীন হবে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে ত্রিপুরার রাজা সিপাহীদের আক্রমণ করে বসলো। ত্রিপুরার রাজা ছিলেন ঈশান চন্দ্র মাণিক্য।
ভারতীয় হয়ে ত্রিপুরা রাজ ইংরেজদের সাথে হাত মিলাবে এটা অকল্পনীয় ছিল। এই সংগ্রামে অনেক বিদ্রোহী সৈন্যের মৃত্যু হয়। রজব আলীরা আর ত্রিপুরা গেলেন না। তারা তখন মনিপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পায়ে হেঁটে সিপাহীরা ক্লান্ত দেহে সিলেট পৌঁছান। তাদের সিলেটে আসার খবর স্থানীয় জমিদার ইংরেজদের নিকট পাঠিয়ে দেয়। জমিদার ও ইংরেজ মিলে সিদ্ধান্ত নিল- মেজর বাইঙ এর নেতৃত্বে রাতের অন্ধকারে আক্রমণ করার।
খবর পেয়ে রজব আলী অনেকগুলো খড়ের মূর্তি তৈরি করেন। পাহাড়ের ঢালে তাঁবু গেড়ে সন্ধ্যায় মূর্তিগুলোকে সিপাহীদের পোশাক পরিয়ে তাঁবুর চারপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। আর বিদ্রোহীরা পাহাড়ের আড়ালে গা-ঢাকা দিয়ে রইলেন।
ওদিকে মেজর বাইঙ-এর নেতৃত্বে বৃটিশ ও জমিদার সৈন্যরা রাতের অন্ধকারে মুর্তিগুলোর উপর আক্রমণ করে বসে। এ সুযোগে হাবিলদার রজব আলী মেজর বাইঙকে নিহত করেন। যুদ্ধে অনেক বৃটিশ ও জমিদার সৈন্য নিহত হয়। এরপর তারা মনিপুরের দিকে রওনা হন।
মনিপুর প্রবেশ করলে সেখানেও তারা সিলেটী জমিদারদার বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হন। এ যুদ্ধে সিপাহীদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং তারা চারদিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন সংঘর্ষে ২০৬ জন সিপাহী মারা যায়।
অবশেষে রজব আলীর দল রেঙ্গুনের পার্বত্যাঞ্চলে চলে যান। এরপর তাদের আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। হাবিলদার রজব আলী যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, ত্রিপুরার রাজা ও সিলেটের জমিদার বিশ্বাসঘাতকতা না করলে ভারত তথা বাংলার ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।
তার ইতিহাস হচ্ছে-
# প্রকৃত ও সর্বপ্রথম অস্ত্রাগার লুট;
# সর্বপ্রথম ও একমাত্র কোষাগার লুট;
# বাংলায় (পূর্ব ও পশ্চিম) সর্বপ্রথম বিদ্রোহ।
Rent for add