মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৮:০৯:১৫
১৯৬২ সালের এইদিনে (২৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার) জুমার সালাতের মাধ্যমে বাইতুল মুকাররমে সালাত আদায় শুরু হয়। ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম মসজিদ। এখানে একসাথে ৪০,০০০ মুসল্লি সালাত আদায় করতে পারেন। ১৯৭৫ সাল থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়। তাঁরা ঢাকার পল্টনে এই মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। ১৯৫৯ সালে ‘বায়তুল মুকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।
পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থল-পল্টনে মসজিদটির জন্য ৮.৩০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। সেই আমলে ঐ স্থানে একটি বড় পুকুর ছিল, যা ‘পল্টন পুকুর’ নামে পরিচিত ছিল। পুকুরটি ভরাট করে ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি আইয়ুব খান মসজিদের কাজ উদ্ভোধন করেন।
সিন্ধুর বিশিষ্ট স্থপতি আব্দুল হুসেন থারিয়ানিকে মসজিদ কমপ্লেক্স এর নকশার জন্য নিযুক্ত করা হয়। কমপ্লেক্সে দোকান, অফিস, গ্রন্থাগার ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। নির্মাণ কাজ মোটামুটি সম্পন্ন হবার পর ১৯৬৩ সালের ২৫ জানুয়ারি শুক্রবার প্রথমবারের জন্য এখানে সরকারীভাবে নামাজ পড়া হয়।
মসজিদটির নির্মাণ কাজ চূড়ান্ত শেষ হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। ২০০৮ সালে সৌদি সরকারের অর্থায়নে মসজিদটি অনেক সম্প্রসারিত করা হয়। মসজিদটি বর্তমানে আটতলা। নিচতলায় রয়েছে বিপণিবিতান ও একটি বৃহত্তর অত্যাধুনিক সুসজ্জিত মার্কেট কমপ্লেক্স। দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়া হয়।
মসজিদটিতে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি বেশ কিছু আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনও রয়েছে। ক্বাবার আদলে নির্মিত বায়তুল মোকাররমের বৃহৎ ঘণক্ষেত্রটি একে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছে। যা এই মসজিদটিকে বাংলাদেশের অন্য যেকোন মসজিদ থেকে আলদা করেছে।
মসজিদটি বেশ উঁচু, এর প্রধান ভবন ৩০.১৮ মিটার বা ৯৯ ফুট উঁচু, রং সাদা। মূল নকশা অনুযায়ী, মসজিদের প্রধান প্রবেশপথ পূর্ব দিকে হওয়ার কথা। এর দক্ষিণ ও উত্তর পার্শ্বে ওযু করার জন্য জায়গা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে, মসজিদে প্রবেশ করার বারান্দার উপর দুটি ছোট গম্বুজ রয়েছে।
মসজিদে প্রবেশের বারান্দাগুলিতে তিনটি অশ্বখুরাকৃতি খিলানপথ রয়েছে, যার মাঝেরটি পার্শ্ববর্তী দুটি অপেক্ষা বড়। ভিতরে দুটি ছাদহীন আঙ্গিনা প্রধান নামাজ কক্ষের আলো ও বাতাস চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিন দিকে বারান্দা দ্বারা ঘেরা প্রধান নামাজ কক্ষের মিহরাবটি আয়তাকার, যার আয়তন ২৪৬৩.৫১ বর্গ মিটার।
সমগ্র মসজিদ জুড়েই অলংকরণের আধিক্যকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। মসজিদের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে বাগান। বাগানটি মুঘল শৈলীতে স্থাপন করা। মসজিদের অভ্যন্তরে ওযুর ব্যবস্থাসহ মহিলাদের জন্য পৃথক নামায কক্ষ ও পাঠাগার রয়েছে। মসজিদের ২য় তলায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার রয়েছে।
১ম তলার আয়তন ২৬,৫১৭ বর্গফুট, ২য় তলার আয়তন ১০,৬৬০ বর্গফুট, ৩য় তলার আয়তন ১০,৭২৩ বর্গফুট, ৪র্থ তলার আয়তন ৭৩৭০ বর্গফুট, ৫ম তলার আয়তন ৬,৯২৫ বর্গফুট এবং ৬ষ্ঠ তলার আয়তন ৭৪৩৮ বর্গফুট। জুমা ও ঈদের সময় বাড়তি ৩৯,৮৯৯ বর্গফুটে সালাত আদায় করা হয়।
মহিলাদের ৬,৩৮২ বর্গফুটের নামাজের জায়গা রয়েছে, যা মসজিদের তিনতলার উত্তর পাশে অবস্থিত। পুরুষদের ওজুখানার জন্য ব্যবহৃত হয় ৬,৪২৫ বর্গফুট। মহিলাদের ওজুখানার জন্য ব্যবহৃত হয় ৮৮০ বর্গফুট। মসজিদের প্রবেশ পথটি রাস্তা হতে ৯৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।
মসজিদটি নির্মাণের পর থেকে যাঁরা সম্মানিত খতিবের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন-
১. মাওলানা আব্দুর রহমান কাশগরি (জন্ম: ১৯১২ – মৃত্যু: ১৯৭১)
২. মাওলানা ক্কারী উসমান মাদানী (মৃত্যু: ১৯৬৪, আনুমানিক)
৩. মুফতী সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (জন্ম: ১৯১১- মৃত্যু: ১৯৭৪)
৪. মুফতি মাওলানা আব্দুল মুইজ (মৃত্যু: ১৯৮৪, আনুমানিক)
৫. মাওলানা উবায়দুল হক (জন্ম: ১৯২৮ – মৃত্যু: ২০০৭)
৬. হাফেজ মুফতি মোহাম্মদ নূরুদ্দীন (জন্ম: ১৯৫৪ – মৃত্যু: ২০০৯) [ভারপ্রাপ্ত]
৭. প্রফেসর মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন
Rent for add