মুহাম্মদ নূরে আলম : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ১৬:৩৩:০০
মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বাংলার উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সঙ্কটময় মুহূর্তে আশাহীন-দিশাহীন জাতিকে মুক্তির নেশায় উজ্জীবিত করতে, পূর্ববাংলা তথা আজকের বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রাশ্চাত্যের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। ইতিহাসের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে, নানা ভাস্বর অধ্যায়ের রূপকার হয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতিষ্ঠার গৌরবের ৯৭ বছর পেরিয়ে পা রাখতে যাচ্ছে ৯৮ বছরে।
বঙ্গভঙ্গ রদেরও ১০ বছর পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকার পূর্বে আমাদের এই ভূখণ্ডে ইসলামী শিক্ষার ছোট-বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছিল। ব্রিটিশরা আসার পর ভারতবর্ষের অন্যান্য স্থানে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ হলেও আমাদের এই বাংলা প্রদেশ থেকে যায় বরাবরের মত অবহেলিত। বঙ্গভঙ্গ থেকে বঙ্গভঙ্গ রদের পরবর্তী সময়ে পূর্ববাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী উচ্চশিক্ষার সার্বিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। আধুনিক প্রাশ্চাত্য শিক্ষা অর্জনের অধিকার এই ভূখণ্ডের মুসলমানদের আন্দোলন করেই অর্জন করে নিতে হলো। দীর্ঘ আন্দোলনের অর্জন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অধিকাংশ কলেজ কলকাতা বা তার আশপাশে অবস্থিত ছিল। পূর্ববাংলা আসাম অঞ্চলে কলেজ কম ছিল। উচ্চশিক্ষার জন্য গোটা আসামে মাত্র দু’টি কলেজ ছিল। সিলেটের এমসি কলেজ ও গৌহাটির কটন কলেজ। গৌহাটিতে তখন একটি ল কলেজও ছিল। উল্লেখ্য যে, আজকের সিলেট তখন আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বঙ্গভঙ্গে আসাম ও পূর্ববাংলা নিয়ে আলাদা প্রদেশ গঠন করা হয়েছিল।
বঙ্গভঙ্গ রদ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে, পূর্ববাংলার আশাহত, বিক্ষুব্ধ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সান্ত্বনা দিতে ও বিক্ষোভের মাত্রা প্রশমিত করতে তৎকালীন ব্রিটিশ রাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। অনেকেই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য ছিল। দীর্ঘ সময় কোন জনগোষ্ঠীকে অধিকারবঞ্চিত রেখে ক্ষমতার স্থায়ীত্ব দীর্ঘ করা যায়না, এ কথা তারা খুব ভাল করেই জানতো। কৃষক মুসলমানের সন্তানরা শিক্ষাদীক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাক, এমন মহৎ উদ্দেশ্য তাদের মধ্যে ছিল না। সহজ কথায় ব্রিটিশরা তাদের রাজত্ব দীর্ঘস্থায়ী করতে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। প্রথমত, বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে মুসলমানরা ছিল বিক্ষুব্ধ। এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ক্ষুব্ধ রেখে শাসন দীর্ঘস্থায়ী করা যাবে না। এমন উপলব্ধি থেকে শাসনক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার কূটকৌশলের অংশ হিসেবে ব্রিটিশ সরকার এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। দ্বিতীয়ত, তারা চেয়েছিল কিছু ‘মহৎ বর্বর’ তৈরি করতে, যারা তাদের দালালি করবে। সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে এ ভারতবর্ষে শাসন দীর্ঘস্থায়ী করতে কিছু অগ্রসর শ্রেণীর দালাল প্রয়োজন ছিল।
ঢাকাকে রাজধানী করে বাংলা ও আসাম প্রদেশ নিয়ে ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর ‘বঙ্গভঙ্গ’ নামের প্রদেশটি কার্যকর হয়। শিক্ষাদীক্ষাসহ সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের জন্য বঙ্গভঙ্গ তাদের প্রাণে আশার সঞ্চার করেছিল। তৎকালীন হিন্দু নেতারা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রচণ্ড বিরোধী…
এমন মানসিকতা নিয়ে তারা ইতঃপূর্বে কলকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বাই এই প্রধান শহরে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী যোগ দেয়নি। আর ইংরেজরা এ বিষয়টি সামনে রেখেই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে। শাসনকার্য পরিচালনার সুবিধার জন্য তারা চেয়েছিল ভারতীয়দের একাংশকে সভ্যতা ও ভব্যতার শিক্ষা দিয়ে ‘মহৎ বর্বরে’ রূপান্তর করতে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।
ঢাকাকে রাজধানী করে বাংলা ও আসাম প্রদেশ নিয়ে ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর ‘বঙ্গভঙ্গ’ নামের প্রদেশটি কার্যকর হয়। শিক্ষাদীক্ষাসহ সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের জন্য বঙ্গভঙ্গ তাদের প্রাণে আশার সঞ্চার করেছিল। তৎকালীন হিন্দু নেতারা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রচণ্ড বিরোধী। তারা শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারকে বঙ্গভঙ্গ বাতিলে বাধ্য করে। ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর ‘বঙ্গভঙ্গ রদ’ ঘোষিত হয়। এ খবর পূর্ব বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত মুসলমানদের কাম্য ছিল না। বঙ্গভঙ্গের ফলে সামান্য কয়েক বছরের ব্যবধানে মুসলিম সমাজে সার্বিক যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল, এ ঘোষণায় তা কর্পূরের মতো উবে যায়। মুসলিম সমাজ তাতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
বিক্ষোভের তীব্রতা আঁচ করতে পেরে পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে ২৯ জানুয়ারি তিন দিনের এক সফরে ঢাকা আসেন। এ সময় নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ ১৯ জন মুসলিম নেতার একটি প্রতিনিধিদল ৩১ জানুয়ারি গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে দেখা করেন। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে পূর্ববাংলার মুসলমানরা সব দিক থেকে যে নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এ বিষয়টি জানিয়ে তারা আবার বঙ্গভঙ্গ চালুর দাবি জানান। না হয় এর ক্ষতিপূরণ স্বরূপ কমপক্ষে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার দাবি করেন তারা।
১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে ওই বিশ্ববিদ্যালয স্থাপিত হলেও তার পঠন-পাঠন ক্ষেত্র হয় বেশ সীমাবদ্ধ। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও ব্যাপারটি ঠিকভাবে নিতে পারেননি। তিনি তাই লিখেছিলেন : ‘…মুসলমান নিজের প্রকৃতিতেই মহৎ হইয়া উঠিবে ইহাই মুসলমানের সত্য ইচ্ছা। অতএব যাহারা স্বতন্ত্রভাবে হিন্দু বা মুসলমান বিশ্বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে ভয় করেন তাহাদের ভয়ের কোন কারণ নাই এমন কথা বলিতে পারি না।‘
জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঘোষণা করেন : The Government of India realised that education was the true salvation of the Muslims and that the Government of India, as an earnest of their intentions, would recommend to the Secretary of State for the constitution of University of Dacca.
১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বাতিল হওয়ায় ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার জন্য ইংরেজ সরকার প্রতিশ্রুতি দেয়। মুসলমানেরা হতভম্ব হয়ে দেখল, তাতেও হিন্দুরা আপত্তি করছে। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও রাসবিহারী ঘোষের মত বুদ্ধিজীবীরাও বলতে থাকেন যে, তার ফলে, বাঙ্গালী জাতি ও সংস্কৃতির ক্ষতি হবে। ঢাকার হিন্দুরাও ওই মত সমর্থন করে।
১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে ওই বিশ্ববিদ্যালয স্থাপিত হলেও তার পঠন-পাঠন ক্ষেত্র হয় বেশ সীমাবদ্ধ। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও ব্যাপারটি ঠিকভাবে নিতে পারেননি। তিনি তাই লিখেছিলেন : ‘আমার নিশ্চয় বিশ্বাস, নিজেদের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রভৃতি উদযোগ লইয়া মুসলমানরা যে উৎসাহিত হইয়া উঠিয়াছে তাহার মধ্যে প্রতিযোগিতার ভাব যদি কিছু থাকে তবে সেটা স্থায়ী ও সত্য পদার্থ নহে। ইহার মধ্যে সত্য পদার্থ নিজেদের স্বাতন্ত্র্য উপলব্ধি। মুসলমান নিজের প্রকৃতিতেই মহৎ হইয়া উঠিবে ইহাই মুসলমানের সত্য ইচ্ছা। অতএব যাহারা স্বতন্ত্রভাবে হিন্দু বা মুসলমান বিশ্বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে ভয় করেন তাহাদের ভয়ের কোন কারণ নাই এমন কথা বলিতে পারি না।’ (পরিচয় “হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর” প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য)”। সৈয়্দ আব্দুল হালিম-বাঙ্গালী মুসলমানের উৎপত্তি ও বাঙ্গালী বিকাশের ধারা (তৃতীয় খন্ড / পরাধীনতা ও প্রতিকার) নবযুগ প্রকাশনী ফেব্রুয়ারি, ২০১৬। পৃ: ২১১]
১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর আগা খানের নেতৃত্বে ভারতের ৩৫ জন মুসলিম নেতা সিমলায় ভাইসরয় মিন্টোর সাথে দেখা করে মুসলমানদের পক্ষ থেকে কতিপয় সুনির্দিষ্ট দাবী পেশ করেন। অন্যতম দাবীটি ছিল ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। হিন্দুদের চক্রান্তে বঙ্গভঙ্গ রদের পর ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারী ভারতের বড়লাট নবাবকে সান্তনা দেয়ার জন্য ঢাকায় আসেন এবং বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ঢাকা বিশ্বব্যালয় প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন। কিন্তু অন্যান্য উগ্রবাদী হিন্দু নেতাদের সাথে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ আশ্বাসেরও চরম বিরোধিতা করেন। ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে হিন্দুরা প্রতিবাদ সভা ডাকে। প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কারণ তিনি ছিলেন জমিদার। তিনি মুসলমান প্রজাদের মনে করতেন লাইভ স্টক বা গৃহপালিত পশু। সূত্র: [নীরদচন্দ্র চৌধুরী, দি অটোবায়োগ্রাফি অব এন আননোন ইন্ডিয়ান দ্রষ্টব্য] এবং একশ বছরের রাজনীতি : আবুল আসাদ।
কাজেই বাংলার মাটি, বাংলার জলের জন্য একবছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রেমে গদ গদ হয়ে গান লিখলেও এক বছর পর বাংলার কৃষকদের ছেলে শিক্ষিত হবে তা তিনি সহ্য করেননি। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে নবশিক্ষিত মুসলমান সমাজকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের সন্তানদের শিক্ষিত হয়ে বুদ্ধিজীবী হলে চিরকাল সেবাদাস করে রাখা যাবে না। একথা চিন্তা করেই বোধ হয় হিন্দু বুদ্ধিজীবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরা সেদিন আতঙ্কিত ও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে উগ্রবাদী হিন্দুরা কতটা ক্ষিপ্ত হয়েছিল এর প্রমাণ পাওয়া যাবে সেকালের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য, বিবৃতি ও পত্রিকার ভাষ্য থেকে। ১৯১২ সালে ১৬ই ফেব্রুয়ারি বড় লাটের সাথে বর্ধমানের স্যার রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিমন্ডলী সাক্ষাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা না করার পক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তির জাল বিস্তার করেন। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে আভ্যন্তরীণ বঙ্গ বিভাগ-এর সমার্থক, তাছাড়া পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা প্রধানত কৃষক; তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তারা কোন মতেই উপকৃত হবে না।’ [Report of the Calcutta University Commission Vol. IV, Prt. II, P. 133]
‘সিলেটের বিপিনচন্দ্র পাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অশিক্ষিত ও কৃষক বহুল পূর্ববঙ্গের শিক্ষাদান কার্যে ব্যাপৃত থাকতে হবে; পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণের শিক্ষানীতি ও মেধার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকবে না।’ [ঢাকা প্রকাশ, ১১ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারী ১৯১২ ]। এছাড়া হিন্দু সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন এবং সভার সিদ্ধান্তগুলো বৃটিশ সরকারের কাছে প্রেরণ করতে থাকেন। বাবু গিরিশ চন্দ্র ব্যানার্জী, ড: স্যার রাসবিহারী ঘোষ এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখার্জীর নেতৃত্বে হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা বড় লাট হার্ডিঞ্জের কাছে ১৮ বার স্মারকলিপি পেশ করেন [Report of the Calcutta University Commission ]| As compensation for the annulment of the partition as well as protest against the general antipathy of the Calcutta University towards the Muslims, the deputation pressed a vigorous demand for a University at Dacca. In his reply, Lord Hardinge said that the Government of India realised that education was the true salvation of the Muslims and that the Government of India, as an earnest of their intentions, would recommend to the Secretary of State the constitution of a University at Dacca. On 2 February, 1912, a communique was published stating the decision of the Government of India to recommend the constitution of a University at Dacca. [ C. U. Commission Report, Vol. IV, Pt. II, P. 133 ]।
আশ্চর্যের বিষয়, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার মিছিলে শরীক হয়েছিলেন মানবতার কবি দাবীদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। ১৯১৫ সালের ১৬ই জানুয়ারী নবাব সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। নবাব সলিমুল্লাহর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে শক্ত হাতে হাল ধরেন সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। সেই ১৯১১ সালের ৩১ জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণার দিন থেকে ১৯২০ সালের ২৩শে মার্চ-এ বড় লাটের আইন সভায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট’ পাস হওয়ার দিনটি পর্যন্ত তিনি বিরামহীন প্রচেষ্টা চালান। কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহও বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাসের ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। অবশেষে কট্টর হিন্দু নেতাদের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯২১ সালের জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়টি নবাব দেখে যেতে পারেননি। এছাড়া জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নীও (চাঁদ মিয়া) পূর্ব বাংলার মুসলমানদের শিক্ষার জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। অথচ আজ নবাব সলিমুল্লাহর নামে একটি হল আছে বটে; কিন্তু কায়েদ আযম জিন্নাহ, নওয়াব আলী চৌধুরী ও জমিদার চাঁদ মিয়ার কোন স্মৃতি চিহ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেই। (নওয়াব আলী চৌধুরীর নামে পরে সিনেট ভবনের নামকরণ করা হয়)।
আর যাদের আন্দোলনের ফসল এই এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অনেকে তাদের নামই জানে না। তাদেরকে নিয়ে কোন আলোচনা বা স্মৃতি সভা হয় না। আলোচনা বা স্মৃতি সভা হয় বঙ্কিম, সূর্যসেন ও রবীন্দ্রনাথদের নিয়ে।
আর যাদের আন্দোলনের ফসল এই এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অনেকে তাদের নামই জানে না। তাদেরকে নিয়ে কোন আলোচনা বা স্মৃতি সভা হয় না। আলোচনা বা স্মৃতি সভা হয় বঙ্কিম, সূর্যসেন ও রবীন্দ্রনাথদের নিয়ে। যাদের কল্যাণে চাষার ছেলে থেকে আজকে যারা ভাইস-চান্সেলর, অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী, আমলা, রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ, বিচারপতি, শিল্পপতি, শিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, প্রযোজক-পরিচালক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন, সে-সব কৃতি সন্তানেরা আজ উপেক্ষিত, নিন্দিত। হায়রে দূর্ভাগা দেশ। হায়রে দূর্ভাগা জাতি। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকেই এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।
বর্তমানেও তা অব্যাহত রয়েছে। পূর্বে এই এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে রবীন্দ্র বাবুরা। বর্তমানে করছে মুসলমান নামধারী রবীন্দ্র ভক্তরা। বাংলাদেশের এক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রবন্ধে নিম্নোক্ত মন্তব্য করেছিলেন : ‘রবীন্দ্রনাথের মাটিতে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথকে অতিক্রম করার সাধনা, রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে বেঁচে থাকার, বিকশিত হওয়ার কিংবা রবীন্দ্রনাথকে অতিক্রম করার বর্বর অহংকার হচ্ছে পায়ের তলায় জমি শুন্য, শেকড় শুন্য, নির্বোধের অহংকার!?।’ [ সরদার ফজলুল করিম : রবীন্দ্রনাথের অস্তিত্বে আমাদের অস্তিত্ব /দৈনিক সংবাদ ২৪ ফাল্গুন, ১৩৯৬ ]।
সচেতন মহলের মতে, দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফজলুল করিমের এই মন্তব্যে নতুন প্রজন্মের মন-মানসিকতা আচ্ছন্ন করারই কথা। তারা স্বভাবতই বিশ্বাস করবে ‘রবীন্দ্রনাথের অস্তিত্ব আমাদের অস্তিত্ব’। এই বিশ্বাসের পরিণাম কি হবে তাও ভেবে দেখা সময়ের দাবী।” সরকার শাহাবুদ্দীন আহমেদ-ইতিহাসের নিরিখে নজরুল-রবীন্দ্র চরিত, বাংলাদেশ কো অপারেটিভ বুক সোসাইটি জুলাই, ১৯৯৮ । পৃ: ২৩০-২৩৩ ]।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার সর্ম্পকে তৎকালীন কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গে মতামত এখানে তুলে ধরা হলো। The Hindu leaders were opposed to the plan of setting up a University at Dacca. They voiced their disapprobation in press and platform. On February 16, 1912 a delegation headed by Dr. Rash Behary Ghose waited upon the Viceroy and expressed apprehension that the creation of a separate University at Dacca would be in the nature of Ôan internal partition of BengalÕ. They also contended that the the Muslims of Eastern Bengal were in large majority cultivators and they would benefit in no way by the foundation of a University. [Ibid., P. 122 ]
In his reply, Lord Hardinge referred to the progress made by the people of Eastern Bengal and Assam during the few years of the partition and said, Ôwhen I visited Dacca I found a wide-spread apprehension, particularly among the Muhammadans, who form a majority of the population, lest the attention which the partition of Bengal secured for the eastern provinces should be relaxed, and that there might be a setback in educational progress. It was to allay this not very unreasonable apprehension that I stated to a deputation of Muhammadan gentlemen that the Government of India were so much impressed with the necessity of promoting education in a province which had made such good progress during the past few years that we have decided to recommend to the secretary of state the constitution of a University at Dacca and the appointment of a special officer for education in Eastern Bengal.Ó The viceroy assured the delegation that no proposals which could lead to the internal partition or division of Bengal would meet the support of the Government of India; and he added that from the fact that he announced the intention of the Government in regard to Dacca to a deputation of Muhammadans it did not follow in any way that the new University would be a Muhammadan University; it would be a University open to all – a teaching and a residential University. [ Ibid., Vol. I , Pt. I, P. 151]
… Dr. R. C. Majumdar, in his article ‘Dhakar Smriti’ has referred to the opposition by Sir Ashutosh Mukharjee, Gurudas Banerjee and others. Dr. Majumder writes that Lord Hardinge told Sir Ashutosh that he was determined to establish Dacca University in spite of all opposition and the Viceroy wanted to know at what price he was prepared to withdraw his opposition to it. Sir Ashutosh thought of using this occasion for a bargain in favor of Calcutta University, of which he was the Vice-Chancellor. He asked for four Proffesorships for his University. The Viceroy accepted his demand and Sir Ashutosh agreed to stop his opposition. This agreement between the Viceroy and Sir shutosh was named the ÔDacca University Pact’. (Sir Ashutosh Bhattacharya, Amader Shei Dhaka Visva Vidyalaya , pp. 24-29)
The educated Hindus criticised the Dacca University as ÔMecca UniversityÕ, ÔFucca (Hollow) UniversityÕ and expressed that Ôa good College (Dacca College) was killed to create a bad University. [ Sir Ashutosh Bhattacharya, Amader Shei Dhaka Visva Vidyalaya , pp. 6 & 56 ]
… educated Hindus said that three Jews, Vice-Chancellor Hartog, Viceroy Lord Reading and Secretary of State E. Montage, had contaminated the University and it would not function. [ Syed Mostafa Ali, Atmakatha, p. 115 ]
… In the annual Court meeting of 1922-23 the Vice-Chancellor in his Presidential speech replied to these critics of the Dacca University. He said that he felt proud of the achievement of the Dacca University in a year and spoke of its progressive type of syllabuses, effective tutorial system, better laboratory and library facilities and personal contacts between the teachers and students. There were increasing demands for books both by students and teachers and such demand for books hardly existed before the University was created. He also recalled that the Dacca University, though open to all, was created in response to the demand of the Muslim community and it was intended as an organ to raise them form their backward position in regard to education. [ Minutes of the Court, 13 February, 1922 ]. Ó – Muhammad Abdur Rahim / The History of the University of Dacca. [ University of Dacca – September, 1981 | P. 5-6 / 39]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আহবান অনুযায়ী ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর (বঙ্গভঙ্গ কার্যকরী করার জন্য ইংরেজ সরকার কর্তৃক ঘোষিত দিবস)-কে ‘রাখীবন্ধন দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক ১৯০৩ সালে লিখিত “আমার সোনার বাংলা” গানটি ‘বঙ্গভঙ্গ রদ’ আন্দোলনে যথেষ্ট গতি সঞ্চার করে। বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার পর পূর্ববাংলার বিক্ষুব্ধ ও বিমর্ষ মুসলমানদের মধ্যে সৃষ্ট অসন্তোষ প্রশমনের জন্য তৎকালীন বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ পুর্ববঙ্গ সফরের কর্মসূচী গ্রহণ করেন এবং তদানুযায়ী তিনি ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারী ঢাকা সফরে আসেন।
ঐদিনই নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী, এ কে ফজলুল হক প্রমুখ মুসলিম নেতৃবৃন্দের একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের বিশেষ অনুরোধক্রমে তৎকালীন বড়লাট ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা প্রদান করেন। উক্ত ঘোষণার পর একই বছর মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিস্তারিত সুপারিশ পেশ করার জন্য ‘নাথান কমিশন’ নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়। দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর অত্র কমিশন একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। পূর্ববাংলার মানুষ এবং মুসলিম নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সরকারী সরকারী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়।
কিন্তু ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা প্রদানের সাথে সাথেই এবারো শুরু হয়ে যায় কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবিদের চরম গাত্রদাহ। সেই একই হিন্দু নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবি যারা বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সরকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবারো তারা গর্জে ওঠে, গড়ে তুলে ব্যাপক আন্দোলন। হিন্দু নেতারা সারা বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে ব্যাপক সভা-সমাবেশের আয়োজন করে। ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলিকাতার গড়ের মাঠে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়।১৯১২ ইং সালের ১২ ফেব্রুয়ারী হিন্দু নেতৃবৃন্দের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল লর্ড হার্ডিঞ্জের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালীন উক্ত প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে তাকে বলা হয় যে, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আভ্যন্তরীণভাবে বঙ্গভঙ্গেরই সমতুল্য। কেননা এর ফলে বাঙালি জাতি বিভক্ত হয়ে পড়বে এবং হিন্দু মুসলমানের মধ্যে বিরাজমান বিরোধ আরো বাড়বে। তাছাড়া পূর্ববঙ্গের মানুষ প্রধানত কৃষক। তাই ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন কোন উপকারেই আসবে না।
১৯১৭ ইং সালের ২০ মার্চ সৈয়দ নওয়াব অলী চৌধুরী ভারতীয় আইনসভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি পুনরায় উত্থাপন করেন এবং অবিলম্বে ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বিল’ পাসের দাবি জানান। আইনসভার পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিলের ‘খসড়া’ প্রস্তুত রয়েছে তবে যুদ্ধ সঙ্কটের মধ্যে সরকার এ বিলে হাত দিতে চান না। যুদ্ধশেষে য্থাসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। অত:পর একই বছর ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন’ নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়। উক্ত কমিশন পূর্বেকার ‘নাথান কমিশন’ রিপোর্ট অনুমোদন করে। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক্ট’ পাস হয়। অবশেষে সকল প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ নয় বছর পর হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবল বাঁধার মুখে রমনার বিশাল সবুজ চত্বরে প্রায় ৬০০ একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বহুল প্রত্যাশিত ও অনেক সংগ্রামের ফসল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রা শুরু করে এবং এক বছর পর ১৯২২ সালে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
মুসলমানদের দাবির প্রেক্ষিতে এ দেশের মুসলমানদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও, প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে মুসলমানরা নিয়োজিত ছিল না, হিন্দুদেরই প্রাধান্য ছিল সর্বক্ষেত্রে। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন “মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়” বলে ব্যঙ্গ করতে কুন্ঠাবোধ করেনি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার জন্য কিন্তু তাদের মাঝে কোন সংকোচ বা কার্পণ্য মোটেই দেখা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর জনৈক ইংরেজ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে অধিষ্ঠিত হন এবং বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে হিন্দু পন্ডিতগণ পরিচালকের আসনে সমাসীন হন। তারা তাদের রুচি ও মন-মানসিকতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসন কার্য পরিচালনা করতে থাকেন। ফলে দেখা যায়, যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিলেন, ঢাকার বুকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাত্র পাঁচ বছর পর সে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই তিনি বিপুলভাবে সংবর্ধিত হন এবং তারো দশ বছর পর তিনি সেখান থেকেই সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রীপ্রাপ্ত হন।
শুধু তাই নয়, একই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে ‘অশোক চক্র’ স্থান লাভ করে। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে সে মনোগ্রাম পরিবর্তিত হয়ে তাতে পবিত্র কোরআনের আয়াত সংযোজিত হলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী নিজেকে মাত্রাতিরিক্ত ‘স্যাকুলার’ বা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ প্রমাণের হীন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পাকিস্তান আমলে পরিবর্তিত সে মনোগ্রাম থেকে পবিত্র কোরআনের আয়াতকে নির্বাসিত করে। একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হল’ এবং ‘ফজলুল হক মুসলিম হল’ দুটির নাম থেকে মুসলিম শব্দ তুলে দেয়া হয়।” মেজর জেনারেল (অব:) এম. এ. মতিন, বীর প্রতীক, পিএসসি / আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতা এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা। আহমদ পাবলিশিং হাউস ফেব্রুয়ারি, ২০০০ । পৃ: ১৮-২২।
Tags: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি, নুরে আলম বর্ষণ, পূর্ববাংলা, বঙ্গভঙ্গ, বাংলাদেশ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
Rent for add